শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন

স্কুল বন্ধ থাকায় কী প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের উপর

স্কুল বন্ধ থাকায় কী প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের উপর

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় স্কুলের বাইরে থাকার কারণে অনেক শিশুর মধ্যেই আচরণগত পরিবর্তন আসতে পারে।

তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতি একদিকে যেমন তাদের সঠিক মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অনভ্যস্ত হওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে শিশুদের মধ্যে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে চলতি বছরের ১৭ই মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এর পর দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সবশেষ গত ১৮ই ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায় যে, আগামী ১৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করছে। চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, অনলাইন ক্লাসের কারণে শিশুদের মোবাইল এবং ইন্টানেটের প্রতি আসক্তি বাড়তে পারে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইসরাত শারমিন রহমান বলেন, অনেক বাবা-মাই তাদের কাছে আসছেন যারা বলছেন যে, প্রযুক্তি আসক্তি বাড়ছে।

এছাড়াও সন্তানদের মধ্যে আরো অনেক আচরণগত নানা পরিবর্তন লক্ষ্য করার কথা বলছেন বাবা মায়েরা। রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুন্নাহার লাকী। তার দুই সন্তান স্কুলে পড়ে। তিনি অনেকটা অভিযোগের সুরেই বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সারাক্ষণই বাসায় থাকছে তার সন্তানেরা। আসক্ত হয়ে পড়ছে মোবাইল এবং ইন্টারনেটের প্রতি। মনোযোগ হারাচ্ছে পড়াশুনার ক্ষেত্রেও।

নুরুন্নাহার লাকী বলেন, ‘সারাক্ষণই ওদের মাথায় থাকে যে কখন মোবাইলটা নিয়ে গেমস খেলতে বসবে। পড়াশুনার কথা বললে সেখানে কোন কান দেয় না।’ কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করলেও বেশিরভাগগুলোই রয়েছে বন্ধ। যার কারণে অনেকটা ঘরবন্দী রয়েছে শিশুরা।
রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া রাইদা।

স্কুল বন্ধ থাকায় ঘরে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে পড়েছে সুমাইয়া। দ্রুত স্কুলে ফিরতে সে উদগ্রীব।

‘বিরক্ত লাগে এখন। ফোন নিয়ে বসে থাকতে হয়। মোবাইলে এডিক্টেড হয়ে গেছি। কম্পিউটার দেখি, ল্যাপটপ দেখি, গান শুনি, পড়াশোনা অবশ্য হচ্ছে না।’

বাবা-মায়েরা বলছেন, শিশুরা বাসায় থাকলেও নিয়মতান্ত্রিক জীবনে আর অভ্যস্ত নয় তারা। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইসরাত শারমিন রহমান বলেন, হঠাৎ করে জীবনযাপনের পরিবর্তন শিশুদের উপর প্রভাব ফেলে।

‘অনেক সময় আমরা দেখি যে, অনেকের আচরণগত সমস্যা হচ্ছে, অনেকে প্রচণ্ড জেদ করছে, ইমোশনাল রিঅ্যাকশন হচ্ছে, কান্নাকাটি করছে কেউ কেউ, কেউ হয়তো জেদ করে কোন কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে, ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহার বাড়ছে,’ বলেন তিনি। তিনি বলেন, বয়সে কিছুটা বড় বা কিশোরদের মধ্যে এই প্রতিক্রিয়া কিছুটা ভিন্ন হচ্ছে।

‘একটু বড়রা পরিবারের অন্যদের সাথে দূরত্ব তৈরি করছে, আইসোলেটেড হয়ে আছে, তারা তাদের রুমেই বেশি সময় কাটাচ্ছে, এই বিষয়গুলো হচ্ছে।’

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরণের আচরণগত পরিবর্তন শিশুদেরকে মহামারী পরবর্তী জীবনেও তাদের খাপ-খাইয়ে নিতে অসুবিধার সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও সেখানে অন্য শিশুদের সাথে খাপ খাওয়ানো এবং শ্রেনীকক্ষে মনোযোগ বজায় রাখা কষ্টকর হবে শিশুদের জন্য।

‘বছর খানেক ধরে বাচ্চারা যদি একটা রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তারপর যদি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়, সেখানে কিন্তু তাকে খাপ-খাওয়াতে বেগ পেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কারণ তখন তারা একা থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। অনেকেই তখন স্কুলে যেতে চাইবে না, বন্ধুদের সাথে মেলামেশা এবং সামাজিকীকরণেও এক ধরণের সমস্যা তৈরি হতে পারে।’

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিশুদের মানসিক এবং সামাজিক উন্নয়ন ও বিকাশে বাবা-মাকেই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা বলেন, একদিকে তাদেরকে যেমন পাশে থাকতে হবে, অন্যদিকে শিশুরা যাতে পরিবারে থেকেই নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, শিশুরা হতাশ হয়ে গেলে বাবা-মাকে তার পাশে থাকতে হবে।

‘পরিবারের বিকল্প কিন্তু কিছু নেই। আর এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পরিবারের উপরই এসে পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের পাশে, কিশোর-কিশোরীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের বোঝানো, তাদের সময় দেয়া-পরিবারকেই করতে হবে’। ড. ফাতেমা রেজিনা মনে করেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও শিশুদের নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত রাখতে হলে তাদের দৈনন্দিন কাজের একটি রুটিন করে দেয়া যেতে পারে।

সেক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে, ধর্মীয় প্রার্থনা, খাবার ও ঘুমানোর সময়, বাবা-মায়ের সাথে বিভিন্ন কাজে অংশ নেয়া এবং পড়াশুনার জন্যও একটা সময় বেঁধে দিতে হবে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশে টানা ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877